Top Ad unit 728 × 90

সংবাদ শিরোনাম

recent

বরগুনার আসল "বন্ড" সুনাম দেবনাথ, সরকার দলীয় হিন্দু এমপিপুত্র বলেই কি তবে নিরব প্রশাসন!


প্রশাসনের নাকের ডগায় পর্দার আড়ালে ০০৭ বাহিনী এখনো পুরোদমে সক্রিয়নেতৃত্বে জন আলম। বন্দি মিন্নির চেয়ে মুক্ত মিন্নিকে নিয়ে অনেকেরই ভয়ে ঘুম হয়নি। নাম তার মঞ্জুরুল আলম জন ওরফে জন আলম। আলোচিত গ্যাং ০০৭ বন্ড গ্রুপের অন্যতম মূল হোতা। বরগুনা শহরের সবচেয়ে বড় মাস্তানও সে। চাঞ্চল্যকর রিফাত শরিফ হত্যাকাণ্ডের ৮ দিন পর সে অজ্ঞাত স্থানে গা ঢাকা দেয়।

তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে পুলিশের কাছেও কোনো তথ্য নেই। জনের মোবাইল ফোনের সুইচ অফ। এমনকি তার ফেসবুক আইডিও এখন বন্ধ।

এদিকে নয়ন বন্ড হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বর্তমানে কারাগারে আছে। কয়েক দফা চেষ্টা করেও তার আইনজীবীরা জামিন করাতে পারেননি তাকে।

তবে এলাকার অনেকেই জানিয়েছেনমিন্নি কারাগার থেকে ছাড়া পেলে অনেকের আসল চরিত্র ফাঁস হয়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কায় মুক্ত মিন্নিকে নিয়ে প্রভাবশালীদের কেউ কেউ টেনশনে আছে।

সূত্র বলছেবরগুনার মাদক জগতে জন আলম এক অতি পরিচিত নাম। সে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর রইসুল আলম রিপনের ছেলে।

তবে জনের সবচেয় বড় পরিচয় সে স্থানীয় উগ্রপন্থী হিন্দু সংসদ সদস্যের ছেলে সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অনেকে বলেজন আলম আসলে সুনামের ডান হাত। তার ক্ষমতা ও প্রভাবের পেছনে আর কেউ নয়। রয়েছে খোদ এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ। দিনের বেশিরভাগ সময় জন ও সুনামকে একসঙ্গেই চলাফেরা করতে দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আপনারা অনুসন্ধান করে দেখেন। শহরের মাস্তান হিসেবে অনেক যুবকের নামও শুনতে পাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলসব মাস্তানের বস’ একজনই। সে শম্ভু বাবুর (স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) ছেলে সুনাম। বরগুনার এক নম্বর মাতব্বরও সে। বলা যায় সে বরগুনার আসল বন্ড। মাদক ব্যবসা থেকে সন্ত্রাসীদের শেল্টারদাতা সবকিছুতেই তার নাম আছে। তবে প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস স্থানীয় কারও নেই।

স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছেরিফাত হত্যাকাণ্ডের পর নেপথ্যের কুশীলবদের অনেকের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশ। সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জন আলমকেও খুঁজছে পুলিশ।

ক্রসফায়ারে নিহত সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ডের গুরু হিসেবে পরিচিত ছিল এই জন আলম। এছাড়া সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠ হিসেবে আরও এক যুবকের নাম স্থানীয়দের মুখে মুখে ফিরছে। তার নাম শাওন ওরফে শাওন তালুকদার। তার পিতা সুবল তালুকদার বর্তমানে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক।

সূত্র বলছেসুনাম দেবনাথ এমনিতে ভালো ছেলে হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু তাকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার মূলে যে কয়কজনের হাত আছে তাদের মধ্যে এক নম্বরে আছে শাওন তালুকদার।

শহরের হাইস্কুল সড়কে নিজেদের বাড়ি হলেও শাওন থাকে ডিকেপি রোডের ভাড়া বাড়িতে। দৃশ্যমান আয়ের কোনো উৎস না থাকলেও সে ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণে যায়। মোবাইল সিমকার্ডের ব্যবসার আড়ালে মাদক হল তার আসল ব্যবসা। এ তথ্য বরগুনা শহরে প্রায় সবারই জানা। শহরের কলেজ রোডে শ্বশুর বাড়ি হওয়ার সুবাদে নয়ন বন্ডের সঙ্গে শাওন তালুকদারের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।

সূত্র বলছেশাওন তালুকদার এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথের শেল্টারে ধীরে ধীরে বড়সড় মাদকের ডিলারে পরিণত হয়েছেন। শাওন একা নয়তার আরও দুই চাচাতো ভাই তুষার ও অভি তালুকদারের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তর অভিযোগ আছে। এদের মধ্যে অভি তালুকদার একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেল খাটে। এখনও তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন।

বরগুনার আলোচিত ০০৭ বন্ড গ্রুপের সাবেক এক সদস্য যুগান্তরকে বলেজনের আস্তানা ছিল পৌর মার্কেটের দোতলায়। ছাদের অংশবিশেষ অবৈধভাবে দখল করে সে সেখানে পাকা ঘর নির্মাণ করে। যেখানে রয়েছে তার ডিশ ব্যবসা।

কিন্তু ডিশ ব্যবসার আড়ালে এখান থেকেই মূলত শহরের নানা সন্ত্রাসী তৎপরতা ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হতো। জনের এ বিশেষ আস্তানায় ঘন ঘন যাতায়াত ছিল সুনাম দেবনাথের। এজন্য আস্তানার নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সাজসজ্জায় প্রায় ১৮ লাখ টাকা খরচ করে জন।

শাওনজন ও সুনাম দেবনাথ এ তিনজনের সঙ্গেই নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠতা ছিল। নয়ন ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পরপরই জন আলম ঢাকায় চলে গেছে। শাওন ও অভি তালুকদারও গা ঢাকা দেয়। এখন তাদের আগের মতো শহরে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় না।

সূত্র বলছেরিফাত হত্যাকাণ্ডের পর জন আলমের খোঁজে পৌর মার্কেটের ছাদে কয়েক দফা লোক দেখানো অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলছেনহত্যাকাণ্ডের পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় জন আলম বরগুনাতেই ছিল।

সে সময় পুলিশ তাকে ইচ্ছে করেই ধরেনি। এমনকি তার খোঁজও নেয়নি। কিন্তু রিফাত হত্যার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। একপর্যায়ে পুলিশই তাকে নিরাপদে অন্যত্র সরে পড়ার পরামর্শ দেয়।

রিফাত শরীফ হত্যকাণ্ডের পর স্থানীয় এমপি শম্ভুর বিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি দেলোয়ার গ্রুপের লোকজনও এখন কোণঠাসা। কারণ দেলোয়ার হোসেনের আপন ভায়রা দুলাল ফরাজীর দুই ছেলে খুনের আসামি হিসেবে এখন জেলে। এ দুলাল ফরাজীর বিরুদ্ধেও অভিযোগের অন্ত নেই। বরগুনা শহরে সে বিশাল ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত।

সূত্র বলছেনয়ন বন্ডের ০০৭ গ্রুপের সদস্য না হলেও জেলার অন্যতম দাপুটে যুবক হিসেবে ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিকের নাম আছে প্রথম সারিতে। রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে শুরু করে অনিক।

তবে রিফাত হত্যা মামলায় তার ঘনিষ্ঠভাজন চন্দন ওরফে তোতলা চন্দন গ্রেফতার হলে বেকায়দায় পড়ে অনিক। এরপর থেকে সে অনেকটাই চুপচাপ হয়ে যায়।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে রিফাত হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নয়ন বন্ডকে শেল্টার দিত এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ নিজে। তবে মামলার সব আসামি সুনাম দেবনাথের লোক নয়।

পুলিশের হাতে যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভির হোসেন গ্রুপের ছেলে বলে পরিচিত। এদের মধ্যে রিফাতরিশান ও রাব্বি আকন অন্যতম।

অবশ্য পুলিশ বলছে জেলার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি অনিক ও সাধারণ সম্পাদক তানভিরের বিরুদ্ধে সরাসরি মাদক ব্যবসার অভিযোগ নেই। সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগও অন্যদের তুলনায় অনেক কম। তবে তানভিরের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ আছে। তার মাদক সেবনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

মাদক ব্যবসা যাদের নিয়ন্ত্রণেঃ তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছেবরগুনার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই জেলা পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যের শেল্টারে চলাফেরা করেন। এরা হলেন চরকলোনির হাকিম মৃধা ওরফে হাকিম কন্ট্রাকটরের ছেলে সানি মৃধাপ্রিন্স ওরফে ড্যাফোডিল প্রিন্স ওরফে ধানসিঁড়ি রোডের প্রিন্সআসাদ জামান ওরফে কবি আসাদবাগান বাড়ি লেকপাড়ের মাওলা মীরের ছেলে অয়ন মীরকাঠপট্টির মাহবুবজন আলমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিমেলশিবাপ্রত্যয় প্রান্তসানজিদকালীবাড়ির কালা রাজু ওরফে তারাকান্দা রাজুনিরব হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে মাদক ব্যবসায়ী চোরা রাজিবের বড় ভাই সোহেলজাহাঙ্গীর ওরফে পঙ্গু জাহাঙ্গীর৪ নম্বর ইউনিয়নের ডৌয়াতলার ইমরানকলেজ রোডের ফুলের দোকানের সমীরলাকুরতলার শুভ ওরফে শুভ খানকাঠপট্টির জিন্নাত খানমনিররানা সিনহা ও রায়ভোগ চৌমুহনীর রাজা মেম্বার। এদের বেশিরভাগই আগে সুনাম দেবনাথের গ্রুপের সঙ্গে ঘোরাফেরা করলেও অনেকে এখন নতুন গ্রুপ তৈরি করেছে। আবার কেউ কেউ সুনামের গ্রুপ ছেড়ে অন্য গ্রুপে যোগ দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেনঅঢেল টাকার কারণে এরা সব সময়ই প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থাকে। তাছাড়া মাদকের অনেক সিন্ডিকেট। সব সিন্ডিকেট রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণে নেই। বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ ও স্থানীয় ধনাঢ্য বক্তিরা। বরগুনার তালতলী এখন মাদকের অন্যতম মূল পয়েন্ট হয়ে উঠেছে। কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে ইয়াবার চালান ঢুকতে অসুবিধা হওয়ায় এখন রুট বদলে ইয়াবা পাচার হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে নৌপথে আসছে চালান। বরগুনা শহরে ইয়াবা ঢোকার ক্ষেত্রে ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের গোলবুনিয়া হচ্ছে ট্রানজিট পয়েন্ট। রাতারাতি ধনী হওয়ার নেশায় বরগুনার অনেক রাজনীতিক নেতাও এখন মাদক ব্যবসায় ভিড়ে গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা আফসোস করে বলে, আমার জানামতে শম্ভু বাবু জীবনে কখনও মাদককে শেল্টার দেয়নি। সে নিজে একটা পানও খায় না। কোনোদিন এক টুকরো সুপারি পর্যন্ত মুখে দেয়নি। অথচ তার ছেলের বিরুদ্ধে এখন মাদক ব্যবসার বিশ্বাসযোগ্য প্রমান পাওয়া যাচ্ছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক। স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেনসুনাম দেবনাথ শম্ভু বাবুর একমাত্র ছেলে। এমপির ছেলে হিসেবে সে ততটা খারাপ না হলেও তার আশপাশে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের ওঠাবসা আছে। আজেবাজে ছেলেপেলের সঙ্গে চলাফেরার জন্য বাবা হিসেবে শম্ভু বাবু ছেলেকে অনেক বকাঝকাও করেছে। কিন্তু ছেলে বড় হয়েছে। তাকে সব সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ছেলের কর্মকাণ্ডে শম্ভু বাবু নিজেও কিছুটা অসন্তুষ্ট।



অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে বলে, ‘জন আলম এবং শাওন তালুকদার দুজনই তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তবে তার চেয়েও বড় কথা, জন আলম নিহত রিফাত শরিফের সব থেকে কাছের বন্ধু ছিলো। রিফাতকে রক্তাক্ত অবস্থায় বরিশাল হাসপাতালে নিয়ে যায় জন আলম। সে আরও বলে, ‘নিহত রিফাত আমাদের রাজনৈতিক কর্মী ছিল। স্বাভাবিক কারণেই আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমার প্রতিবাদকে রাজনৈতিক রং দেয়া হল। একটি পক্ষ মিন্নির বাবাকে দিয়ে আমাদের নাম বলিয়েছে। যাতে তারা অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করে আমার বাবার বয়স হয়েছে। আগামীতে তিনি হয়তো রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। তার ছেলে হিসেবে আমাকেও যদি মাইনাস করা যায় তাহলে তাদের পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ জন্যই আমাকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে।
বরগুনার আসল "বন্ড" সুনাম দেবনাথ, সরকার দলীয় হিন্দু এমপিপুত্র বলেই কি তবে নিরব প্রশাসন! Reviewed by sohel on 05:29 Rating: 5
প্রকাশক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল রানা শাখারিয়া (কদিম পাড়া বাজার) বগুড়া । ফোন: +৬০১৭৮৪৭১১৬১ ইমেইল: bogracity7274@gmail.com : নিউজ 24 বগুড়া সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2014 - 2019
,

নিউজ ২৪ বগুড়া

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.