কাশ্মীর ই’স্যুতে খোজ মিল’ছেনা বলিউড অভিনেত্রী জায়রার
কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে বলিউড অভিনেত্রী জায়রা ওয়াসিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না পরিচালক সোনালি বোস। চলমান এই জম্মু-কাশ্মির ইস্যুতে অনেকের মতো তিনিও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ভারতের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিও ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছে। জানা গেছে, জায়রার মতো অনেকের সাথেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে জায়রার সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করেন সোনালি বোস। সেখানে তিনি বলেন, ‘২ সপ্তাহ হয়ে গেল জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
ভারতের গণতন্ত্র অন্ধকার। কংগ্রেসের সময় থেকে উপত্যকায় মানুষদের অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। আমার কষ্ট হয় ওই মানুষগুলোর জন্য। বাঙালি, মারাঠী, গুজরাতি, তামিল সবার কেমন লাগবে, যদি রাতারাতি আপনাদের রাজ্য ভেঙে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দেওয়া হয়? ৩৭০-কে কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গিয়ে সৎভাবে এর উত্তর দিন।
আমাদের নিজেদের লোকেরাই কীভাবে এই দেশে বাস করছেন, এটা ভেবেই আমার বিস্ময় ও রাগ এখন দুঃখে পরিণত হয়েছে। ওদের অনুভূতির সম্পর্কে আমরা শুধুই ধারণা করতে পারি।’ তিনি আরও জানান, জায়রা তার মেয়ের মত। তার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করতে পারছেন না। গত এক বছরে জায়রা ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছেন বলে জানান সোনালি বোস।
এমনকি ৩৭০ ধারা রদের আগের দিনও জম্মুতে জায়রার সঙ্গেই ছিলেন বলে জানান ‘দ্য স্কাই ইস পিঙ্ক’-এর পরিচালক। তার মতে, ভূস্বর্গে হঠাৎ সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ায় জায়রা খুবই চিন্তিত ছিল। তাকে তিনিই আশ্বস্ত করেন বলেও জানান সোনালি।
পরিচালক সোনালি বোসের ‘দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক’ ছবিতে অভিনয় করেছেন জায়রা ওয়াসিম। উল্লেখ্য, সোনালি বোসের এই সিনেমায় অভিনয় দিয়েই বলিউড ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন জায়রা।
শীঘ্রই মুসলিমদের ওপর বড় ধরণের নিপীড়ন চালাবে ভারত সরকার : অরুন্ধতী রায়
ভারতীয় বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মী গত ৫ আগস্ট বিজেপি সরকার একতরফাভাবে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন পুরোপুরি বাতিল করার পর সব ধরনের ভারতীয় জাতীয়তাবাদীরা উল্লাস করে উঠেছিলেন।
এমনকি মূলধারার গণমাধ্যমগুলোও পরোক্ষে সমর্থন দেয় এতে। রাস্তায় নেচে নেচে উল্লাস করে অনেকে। আর ইন্টারনেটে শুরু হয় কাশ্মীরি নারীদের প্রতি ভয়াবহ ধর্ষকামের চর্চা। দিল্লির পাশের প্রদেশ হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার তার রাজ্যে নারী-পুরুষের সংখ্যার সমতা আনতে তার চেষ্টার কথা বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন, ‘আমাদের রাজ্যে নারীদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে আগে বলা হতো, আমরা বিহার থেকে মেয়ে নিয়ে আসবো।
আর এখন বলা হচ্ছে, কাশ্মীরের দরজা খোলা, আমরা এখন চাইলে সেখান থেকেই মেয়ে নিয়ে আসতে পারি।’ এই ধরনের ইতরোচিত বিজয় উল্লাসের মধ্যে কাশ্মীরের মৃত্যু-সদৃশ নীরবতাই সবচেয়ে বড় আওয়াজ হয়ে উঠছে যেন। যেখানে প্রায় ৭০ লাখ মানুষকে পুরো বিশ্ব থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পশুর মতো খাঁচাবন্দি করে রাখা হয়েছে।
এক দেশ এক জাতি গঠনের নামে সেই ১৯৪৭ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ভারত রাষ্ট্র এর নিজের সীমার মধ্যে নিজের জনগণের বিরুদ্ধেই সেনা মোতায়েন করেছে। তালিকাটি অনেক লম্বা- কাশ্মীর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, হায়দ্রাবাদ, আসাম। কাশ্মীর আজ বিশ্বের সবচেয়ে ঘন সামরিকায়িত অঞ্চল। মাত্র সামান্য কয়েকজন ‘সন্ত্রাসী’কে মোকাবেলা করার জন্য সেখানে প্রায় ৬-৭ লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
ভারত নিজেও স্বীকার করে কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের সংখ্যা খুবই নগন্য। ভারত আসলে কাশ্মীরের জনগণকেই শত্রু মনে করে। গত ৩০ বছরে ভারত কাশ্মীরে যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। অন্তত ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে কাশ্মীর সংঘাতে। হাজার হাজার মানুষ ‘গুম’ হয়ে গেছে। হাজার মানুষকে আটক করে নির্যাতন করা হয়েছে। তার ওপর আবার গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আরো ৪৫ হাজার সেনা নানা অজুহাতে কাশ্মীরে মোতায়েন করা হয়।
এরপর ৫ আগস্টের মধ্যেই স্থানীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদেরকে গৃহবন্দী করা হয়। কাশ্মীর পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে নিরস্ত্র করে ফেলা হয়। অথচ এরাই এতদিন কাশ্মীরে ভারতীয় পতাকা উড়াতে সহায়তা করে এসেছে। এখন সেখানে শুধু ভারতীয় সেনারাই রয়েছে। ফলে এখন কাশ্মীরের ভারতবিরোধী অংশই বরং আরো শক্তিশালী হবে।
৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে জম্মু-কাশ্মীরকে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে নিয়ে আসার ফলে কাশ্মীরবাসীদের কী কী উপকার হবে তার লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরেন। কিন্তু তিনি এটা ব্যাখ্যা করে বললেন না, যে কাশ্মীরিদের সম্ভাব্য উন্নতি নিয়ে তিনি বক্তৃতা করছেন, সেই কাশ্মীরিদেকেই কেন তার ওই বক্তৃতার সময় খাঁচায় বন্দী করে রাখতে হচ্ছে।
আর যে সিদ্ধান্তের ফলে কাশ্মীরিদের সমুহ উন্নতি হবে বলে তিনি বকোয়াজ করছেন সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কেন তাদের মতামত নেওয়া হলো না। তিনি এও ব্যাখ্যা করে বললেন না কীভাবে সামরিক দখলদারিত্বে থাকা একটি প্রদেশের জনগণ ভারতীয় গণতন্ত্রের মহান সব উপহার ভোগ করবে। তিনি তাদেরকে অগ্রিম ঈদ শুভেচ্ছা জানালেন কিন্তু তাদের বন্দীদশা কবে কাটবে তা জানালেন না। কাশ্মীর যেন আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার।
পরের দিন ভারতের পত্রিকাগুলো এবং অনেক উদারপন্থী বুদ্ধিজীবি এবং মোদির সমালোচকও মোদির ওই ভাষনের প্রশংসা করলেন। ঠিক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের মতোই ভারতের অনেকে যারা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে উচ্চকণ্ঠ তারাই আবার কাশ্মীরের জনগণের অধিকার নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ধারন করছেন।
১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবেসের ভাষণে মোদি দিল্লির লালকেল্লা থেকে দম্ভ ভরে ঘোষণা করলেন, “তার সরকার অবশেষ ভারতের ‘এক জাতি, এক সংবিধানের’ স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিলো।” অথচ এর আগের দিন সন্ধ্যায়ই উত্তরপূর্ব ভারতের কয়েককটি রাজ্যে বিদ্রোহীরা ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকে বয়কট করার ঘোষণা দেয়। লালকেল্লায় যখন মোদির শ্রোতারা উল্লাস করছিলো তখনও কাশ্মীরের ৭০ লাখ মানুষ খাঁচায় বন্দি ছিলো।
শেনা যাচ্ছে দুই সপ্তাহ ধরে পুরো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরকে আরো বেশ কিছু সময় ধরে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে অচলাবস্থা কাটবে। ওই অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার পর সুচনা হবে আরেকটি ভয়াবহ অধ্যায়ের। কাশ্মীরে যে সহিংসতা শুরু হবে তা ছড়িয়ে পড়বে ভারতজুড়ে। কাশ্মীরে বিজেপি সরকারের আরোপ করা অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার পর সেখানে যে সহিংসতা শুরু হবে তা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বে।
আর একে পুঁজি করেই হিন্দুত্ববাদীরা পুরো ভারতজুড়েই মুসলিমদের ওপর আরো নিপীড়ন শুরু করবে। মুসলিমদের প্রতি শত্রুতা আরো বাড়বে। যে মুসলিমদেরকে ইতোমধ্যেই শত্রু হিসেবে চিত্রায়িত করে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নিচের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
যাদেরকে নিয়মিতভাবে গণধোলাই দিয়ে হত্যাও করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়। মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবিচারের প্রতিবাদকারী মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবি, শিল্পী, শিক্ষার্থী, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিকদের ওপরও নিপীড়নের খড়গ নেমে আসবে। তাদেরও কণ্ঠরোধ করা হবে নৃশংসভাবে। এছাড়া ভারতীয় গণতন্ত্রের ওপরও নেমে আসবে কালোছায়া।
বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালি রাজনৈতিক সংগঠন হলো উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন আরএসএস। এই সংগঠনের রয়েছে ৬ লাখ সদস্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার সরকারের অনেক মন্ত্রীও এই সংগঠনের সদস্য। যাদের রয়েছে প্রশিক্ষিত মিলিশিয়া বাহিনী। ইতালির কুখ্যাত ফ্যাসিবাদি শাসক মুসোলিনির ব্ল্যাকশার্টের মতোই একটি সংগঠন এটি।
এখন থেকে প্রতিটি দিন আরএসএস ভারত রাষ্ট্রের সবগুলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের দখলে নিতে থাকবে। শক্ত হাতে সবগুলো প্রতিষ্ঠানে নিজেদের একচেটিয়া কতৃত্ব স্থাপন করতে থাকবে হিন্দুত্ববাদীরা। অবশ্য বাস্তবে আরএসএস ইতিমধ্যেই সেকাজে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।
কাশ্মীর ই’স্যুতে খোজ মিল’ছেনা বলিউড অভিনেত্রী জায়রার
Reviewed by sohel
on
12:14
Rating: